banner
lefthomeaboutpastarchiveright

কবীর সুমনের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি

মাননীয়েষু,
 
আপনি আমাকে চিনতে পারবেন না। আমি আপনার গানের শ্রোতা অনেকদিন ধরেই। আপনার গান ভাল লাগত, লাগে, কেন লাগে তা বলতে পারব না। আমার এমন কোন সাংগীতিক বোধ নেই যে এর ব্যাখ্যা দেব। যেমন বহু মানুষের সৃজিতের ছবি ভাল লাগে, কেন লাগে তা তাঁরা জানেন না, কারণ তাঁদের সিনেফাইল জীবনের অভ্যাসের মধ্যে বেড়ে ওঠা হয়ে ওঠেনি। আপনার গান নিয়ে এখানে আমি আলোচনা করতেও আসিনি, এ আমার গৌরচন্দ্রিকা মাত্র। নান্দীপাঠেই ঘণ্টা কাবার করব না, সে আশ্বাস দিচ্ছি।  

আপনাকে সরাসরি কবীর সুমন বলে সম্বোধন করলাম। জনাব বা সাহেব বললাম না। আমি মানুষের ধর্মপরিচয়ে তাকে সম্বোধন করা সাধারণত এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। একটি ঘটনা মনে পড়ল। জামাতের প্রাক্তন আমীর এবং রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা সদ্যপ্রয়াত গোলাম আজম এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ নেতা এবং মুজিবের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাজুদ্দিন আহমেদকে, যিনি ১৯৭১ এ মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সম্বোধন করেছিলেন “শ্রী তাজুদ্দিন” নামে। অর্থাৎ আওয়ামী সেকুলার রাজনীতিকে হিন্দু ঘেঁষা এবং মুক্তিযুদ্ধকে ভারতীয় চক্রান্ত প্রমাণে মরিয়া জামাত নেতা এই ধরনের সম্বোধনের রাজনীতি ব্যবহার করেছিলেন। আমি এতে আস্থাশীল নই।

আমি মনে করি যে হিন্দু বাঙ্গালিরা আপনার ধর্ম পরিবর্তন প্রসঙ্গ টেনে এনে আপনার রাজনৈতিক মতের বিরুদ্ধে কথা বলেন  তারা ঘোরতর অন্যায় করেন। কিন্তু আপনিও যেভাবে প্রায় প্রতি পদক্ষেপে আপনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বৈধতা দিতে ধর্মের প্রসঙ্গ, ধর্মান্তরের প্রসঙ্গ আর persecution প্রসঙ্গকে নিয়ে আসেন বিজ্ঞাপনের মত তাকেও আমার
বিশেষ রুচিকর বলে মনে হয়না। আপনি যা লিখছেন তাহা ফেসবুক পোস্ট মাত্র, Acts of the Apostles বা উইলিয়াম কেরী মার্কা অনুবাদে প্রেরিতদের কার্যবিবরণী নয়, যে থেকে থেকে সন্ত পিতর, সন্ত যাকোব, সন্ত থোমাদের অত্যাচারিত হওয়ার দৈব গালগল্প চালানোর দায় থাকবে আপনার। আমি নিজেকে পৃথক করে নিলাম এইসব থেকে। এজন্যই আমি আমার কোন বন্ধুকে পুজো-বিজয়া বা ঈদের শুভেচ্ছা জানাই না কদাচ। তাতে মানুষের প্রভেদটাই বাড়িয়ে তোলা হয় বলে আমি মনে করি।

সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াগড় কাণ্ডে আপনার বিবৃতি অনেকের কাছেই অস্বস্তির কারণ হয়েছে। আপনি দাবী করছেন এই বিস্ফোরণ কোন সন্ত্রাসবাদী কাজ কিনা তার প্রমাণ নেই, দাবী করছেন বিস্ফোরণে নিহত একজনের নাম কেন স্বপন মণ্ডল, বলছেন তেমন বিস্ফোরক হলে গোটা বাড়িটাই উড়ে যেত। বলছেন মমতা কেন ইসলামী মৌলবাদীদের মদত দেবেন, কি তাঁর স্বার্থ?

এ বিষয়গুলিতে যাওয়ার আগে অন্য একটি বিষয় একটু দেখে নেওয়া ভাল। তসলিমা নাসরিন অতি সম্প্রতি টুইট করেছেন এই মর্মে যে আপনি তাঁর বিরুদ্ধে থাকা নানা ফতওয়া সমর্থন করেছেন, তাঁর বই নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন করেছেন, তাঁর নির্বাসনকেও। তিনি এমন দাবীও করেছেন যে আপনি তাঁর ফাঁসির দাবী সমর্থন করেছেন তিনি আপনার প্রফেট/নবীর বিরুদ্ধে লিখেছেন বলে। সেখানে গিয়ে মন্তব্য করেছেন অন্তত দুজন সুপরিচিত হিন্দুত্ববাদী, একজন বিজেপি একজন হিন্দু সংহতি নেতা, আমি তাঁদের মন্তব্য উপেক্ষা করেছি সম্পূর্ণ। এই দাবীর একাংশ যে সত্যি আমি তা জানি, আদিত্য নিগমের এই বিষয়ে লেখা কাফিলার একটি পোস্ট আমি খুঁজে পেয়েছি। সেটা বই ব্যান করা সংক্রান্ত। কিন্তু ফাঁসির দাবী কি আপনি করেছেন সুমন?

আমি অন্তত তসলিমাকে অবিশ্বাস করার খুব একটা কারণ দেখছিনা। আমার মনে আছে কিছুদিন আগেই তসলিমার ভিসা বিতর্কে আপনি এই সময় কাগজে বলেছিলেন যে তসলিমার উচিত তাঁর বিতর্কিত বক্তব্য কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করা, আমাদের দেশের বাস্তবতা বোঝা, প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত লোকজনের সঙ্গে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া। আমি তারপরেই আমার ফেসবুক থেকে আপনাকে বাদ দিই, এবং স্ট্যাটাস দিই। হায়দরাবাদে যে এমআইএমের লোকেরা তসলিমাকে আক্রমণ করেছিল, যারা নিজামের রাজাকার বাহিনীর অবশেষ বলে তাঁর কাফিলার রচনায় লিখেছেন আদিত্য নিগম, তাদের সঙ্গে আপনার কোন পার্থক্য পাইনি। আমি লিখেছিলাম কার সঙ্গে কি মিটিয়ে নেবেন তসলিমা? ‘প্রথম আলো’ সম্পাদক মতিউর রহমানের মত বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবের (সকলের অবগতির জন্যে জানাই যে জুম্মাবারের বিশেষ নামাজে খুৎবা পাঠ যিনি করেন তাঁকেই বলে খতিব) হাতে পায়ে পড়বেন কাগজে প্রকাশিত ধর্মের অবমাননাকারী ছবির জন্য? মাপ করবেন সুমন, যেদিন ডনিগারের হিন্দুধর্ম বিষয়ক বই দীননাথ বাটরা সাহেবের চাপে বাজার  থেকে তুলে নিল পেঙ্গুইন সেদিনও আমি উত্তেজিতভাবে দীননাথদের বিরুদ্ধে লিখেছি, বই ডাউনলোড করার লিঙ্ক শেয়ার করেছি, আবার যেদিন বাংলাদেশের বিখ্যাত দুই নাস্তিক ব্লগার অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীরের বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ সেদেশের ফ্লিপকার্ট রকমারি ডট কম সরিয়ে নিল ফেসবুকার মৌলবাদী এবং নানা জনকে নিয়মিত হত্যার হুমকি দিয়ে জেল খাটা শফিউর রহমান ফারাবীর চাপে, সেদিন তাঁদের বইও শেয়ার করেছি। অবিশ্যি আমি তো সাধারণ মানুষ। রাজনীতি করিনা, ধর্ম করিনা। 

যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে নানারকম কথা বলেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাদের সামলাতে বাংলাদেশের মানুষ এই মর্মে তর্ক করতেন, “ঠিক আছে, বিচার নিরপেক্ষ করার নিশ্চয়তা থাকবে, ঠিক আছে, আওয়ামী লীগ যে নানা অপরাধে অপরাধী তাও মেনে নিলাম, হ্যাঁ, সব হত্যার তদন্তই করা দরকার, এইবার বলুন যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান না চাননা?” আমিও এইভাবে কয়েকটি কথা স্পষ্ট করে বলিঃ

১। সামগ্রিকভাবে কোন সম্প্রদায়কে দোষারোপ করা ঘোরতর অন্যায়।

২। এই মুহূর্তে যেভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে তাতে লাভবান হবেন বিজেপি নেতারা।

৩। যে মাদ্রাসা ছাত্রটিকে হত্যা করা হল তার মৃত্যুর তদন্ত দাবী করছি। এবং করব।

৪। যে দুই গরিব রাজমিস্ত্রি সন্দেহের বশেই গ্রেপ্তার হলেন কাশ্মীর পুলিশের হাতে এবং তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এমন দাবী করা হল তাঁদের জন্য আমি উদ্বিগ্ন, নকশালপন্থী এক সমাজকর্মী এব্যাপারে আমাকে জানান, আমি তাঁকে বলেছি  হেবিয়াস করপাস করতে, এবং বিষয়টা ফেসবুক মারফত সবাইকে জানিয়েছি।

এরপর মূল প্রসঙ্গে আসি। বাংলাদেশে কিন্তু খাগড়াগড় প্রবল আলোচনার সৃষ্টি করেছে, ঢাকা এব্যাপারে অনুরোধ করেছে দিল্লিকে বলেই শোনা যাচ্ছে, শেখ হাসিনা আনন্দবাজারে সাক্ষাৎকার দিয়ে কৌশলে অনেক কথাই বলেছেন, মমতার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের ধারণা অনেকদিন ধরেই বেশ মন্দ। তিস্তাচুক্তি এবং সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নে মমতার অনীহাকে তাঁরা আওয়ামী সরকারকে বিপদে ফেলার একটা চাল হিসেবেই দেখেছেন এবং আওয়ামী লীগ সমস্যায় পড়লে সুবিধে কাদের হবে সেটা কানার ভাই অন্ধও জানে (একটু বাংলাদেশি বাগধারা ব্যবহার করে ফেললাম)। আমি যখন ৭১ টিভিতে ইন্টার্ভিউ দিয়েছিলাম তখন আমাকে সঞ্চালক স্পষ্টই জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গে ইসলামী রাজনীতি কতোটা প্রাসঙ্গিক, মমতার এহেন আচরণের কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে। আমি জানাই যে সাচার  কমিটির রিপোর্টে সংখ্যালঘু মানুষদের বেহাল আর্থসামাজিক অবস্থা তাঁদের প্রণোদিত করেছিল তৃণমূলের দিকে যেতে আর তার ফলশ্রুতিতেই সেই ২৭% ভোট সম্পূর্ণ কুক্ষিগত করেছে তৃণমূল। ঐতিহাসিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম জনগোষ্ঠীর এক বৃহদাংশ বাংলাদেশের প্রতি এবং আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল নন, ভারতের অন্য প্রদেশেও ছবিটা মোটের ওপর এক। ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র মুসলিম মেজরিটি দেশ পাকিস্তান (ইসলামী দেশ নয় কিন্তু, যা ছিল জামাত গুরু মৌদুদীর আপত্তির কারণ, ইসলামী দেশ হতে হলে ইসলামী শাসনতন্ত্র থাকতে হবে, কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন থাকবে না, থাকবে শরীয়া) ভেঙ্গে ভাষা এবং এথনিসিটির ভিত্তিতে একটা দেশ তৈরি হওয়া তাঁরা মেনে নিতে পারেন নি অনেকেই। লখনউ ছেড়ে এসে কলকাতা নিবাসী এক উর্দু কবি ১৯৭১ এ বাঙালি কবিদের সমতলে নেমে এসে বাংলাদেশের জন্য কবিতা লিখেছিলেন বলে শহরের সব উর্দু কাগজ এক বছর তাঁর লেখা বয়কট করে।

ভারতীয় জামাত তাদের বাংলাদেশি গুরুভাইদের বাঁচাতে সবকিছুই করেছেন। জনমত সংগঠিত করেছেন ভারতে, কেরালায় নানা সেমিনার, সভা করেছেন, কলকাতায় একাধিক মিছিল করেছেন। তাঁদের রাজনৈতিক দল নবগঠিত ডাবলুপিআই মুর্শিদাবাদের এক নির্বাচনে মূলধারার দলের ভোট কেটে প্রায় ১২% ভোট পেয়েছে। গোলাম আজম একদা বলেছিলেন তাঁদের প্রধান কার্যালয় ১৯৭১ এও ছিল লাহোর, এখনও লাহোর। জামাত তাই একটি আঞ্চলিক সংগঠন মাত্র নয়। বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, যুদ্ধাপরাধ বিচারের অন্যতম দাবীদার শাহরিয়ার কবীর তথ্যচিত্র করে দেখিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের সংগঠনগুলির সঙ্গে কিভাবে এদের যোগ আছে।

মমতা সরকার এদের প্রথম থেকেই আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন। কলকাতায় শাহবাগের সংহতিতে মিছিল আটকে দেওয়া হয়েছে, অপরপক্ষে সাঈদী-নিজামীদের মুক্তির দাবীতে মিছিল পুলিশি সাহায্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ উপ হাই কমিশনে। ময়দানে সভা করে শেখ হাসিনাকে কলকাতায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁর ছবি পা দিয়ে মাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জামাতি শক্তিবৃদ্ধিতে লাভবান হয়েছে বিজেপি এবং তার নানা শাখা প্রশাখা। এদের উত্থানও কলকাতায় হয়েছিল মোটামুটি ২০০৮ থেকে, তখন সিপিএম দুর্বল হতে শুরু করেছে, তৃণমূল আসব আসব করছে। ২০০৯ এ ক্ষমতায় আসে লীগ, ২০১০ এর মার্চ থেকে শুরু হয় যুদ্ধাপরাধ বিচার। সেই শুরু জামাতের এপারে পালানোর। পরবর্তীকালে তৃণমূলের একাধিক সাংসদের নাম জড়িয়েছে সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত থাকার জন্য, কিন্তু দল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। একজনকে কেন্দ্র থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে মাত্র। শাহবাগ বিরোধী মিছিল প্রসঙ্গে আলোচনা করেছিলেন গর্গ চট্টোপাধ্যায়, ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় রাজনীতির বাড়বাড়ন্তের কথা বলেছিলেন। সেখানে উঠে এসেছিল গ্রামেগঞ্জে তারেক মানোয়ার হাসানের ওয়াজ বাজানোর প্রসঙ্গ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা জানিয়েছে ২০১৩য় এক বছরে ১০০ র বেশি সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়েছে এই রাজ্যে, যা আগে ছিল অভাবনীয়। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ বাংলাদেশের নয়া দিগন্ত নামক জামাতি পত্রিকার সংবাদদাতা ছিলেন, যে মিডিয়া হাউসের প্রধান জামাতের মজলিশে শুরা সদস্য মীর কাসেম আলি, এই রবিবার যাকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিল।

আপনি তারেক মানোয়ার হাসানের ওয়াজ শুনেছেন সুমন? বা জামাতের নায়েবে আমীর, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ওয়াজ (নামের আগে আল্লামা লিখলাম না, কারণ আল্লামা অর্থ জ্ঞানী, ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি না থাকলে এটি নামের আগে কেউ বসাতে পারেন না)? আমি, আমার ব্যক্তিগত উৎসাহ হেতু, শুনেছি। এবং অনেকগুলি শুনেছি। সাঈদীর কণ্ঠের আমি ফ্যান হয়ে উঠেছিলাম বলা চলে। এরা ওয়াজে কি বলেন পারলে একটু শুনে দেখবেন।

খাগড়াগড়ে নাম উঠে এসেছে বাংলাদেশের জেএমবি বা জমিয়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ নামক জঙ্গি সংগঠনের। আপনি নিশ্চয় জানেন এদের নেতা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই, যে আফগানিস্তান যুদ্ধে লাদেনের সহচর ছিল, সে কিভাবে রাজশাহী জেলায় সমান্তরাল প্রশাসন চালাত? কিভাবে ২০০৪ এর ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনা সহ গোটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে হত্যা করতে চেয়েছিল এরা, যার পরিকল্পক ছিলেন খালেদা জিয়া পুত্র তারেক রহমান, খালেদা সরকারের শিল্পমন্ত্রী এবং জামাতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী (যুদ্ধাপরাধে এবং আলফা জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহের মামলায় আলাদা আলাদা করে ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত), সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহম্মদ মুজাহিদ (যুদ্ধাপরাধ হেতু ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর (অস্ত্র মামলায় ফাঁসির হুকুম হয়েছে), আব্দুর রহমান পিনটু প্রমুখ। নিশ্চয় জানেন বাংলা ভাই আর শায়খ আব্দুর রহমানের ফাঁসি হয়েছে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সামরিক সরকারের আমলে? এরা বাঙ্গালির সঙ্গীত সংস্কৃতির বিরোধী ছিল সুমন, ঢাকার রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের রবীন্দ্রগানের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে অনেক সঙ্গীত শিক্ষার্থী শিশুকে এরা হত্যার চেষ্টা করেছিল। এদেরই সঙ্গে বর্ধমান কাণ্ডের যোগের কথা এসেছে বারবার, বিশেষ করে বাংলাদেশের কাগজে। এটা তদন্তসাপেক্ষ।  কিন্তু আপনি তো একজন গানের মানুষ, ফৈয়াজ খান সাহেবের কবর যারা ধ্বংস করেছে তাদের তীব্র ঘৃণা করেন, করাই উচিত। সেইসঙ্গে নাহয় এদেরও একটু ঘৃণা করলেন সুমন? ঘৃণার ভাগে কি কম পড়ে যাবে তাতে?

আপনি ফেসবুকে এক মন্তব্যে দেখলাম তাবলীগি মুসলমানদের তাচ্ছিল্য ভরে ইসলামবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন, কেন সুমন? তাবলীগ জামাত শান্তিপূর্ণভাবে ধর্ম প্রচার করে, মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেয় তাদের নিজেদের মত করে, আত্মিক জিহাদের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে অস্ত্রের জিহাদের বদলে, রাজনৈতিক ইসলাম এবং ইসলামপন্থীদের এড়িয়ে চলে বলে? এই অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে করে থাকে কারা জানেন তো? জামাতে ইসলামী আর হিজবুত তাহরীরের মত দল। আপনিও কি এদের মতাদর্শে বিশ্বাস করেন? বহু জঙ্গিবাদী ইসলামী ওয়েবসাইটে তাবলীগের বিরুদ্ধে প্রচার করা হয়, সৌদি গ্র্যান্ড ইমাম তাদের আক্বীদা ঠিক নেই বলে একবার ফতওয়া দিয়েছিলেন এবং সেটা কোন যুক্তিতে কোন আয়াত উল্লেখ করে তাও আমি জানি। এদের উদ্দেশ্য বোঝা যায়। কিন্তু আপনার? আপনি কি আলেম, আল্লামা, ওলামা, মাশায়েখ? কত বছর আরবী পড়েছেন? কোন পাঠক্রম, দেওবন্দি না অন্য কিছু? কোন মাদ্রাসা? কোন ইউনিভার্সিটি মদিনা না আল-আঝার? যাকে তাকে ইসলামবিরোধী ঘোষণা করার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?   

আলীয়া মাদ্রাসা আর খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার পার্থক্য মানুষকে বোঝাতে হবে। কিন্তু খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার সমস্যাগুলি তো তাতে চাপা পড়ে যাবে না। এক বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আমরা আধুনিক যুগে জীবিকানির্বাহের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত করে ছেড়ে দিচ্ছি, যাদের একমাত্র রোজগারের রাস্তা, সাঈদী সাহেবের ভাষা্‌য়, কারো বাপের জানাজা পড়িয়ে ১০ টাকা আয় করা। ধর্মের শিক্ষা সেকুলার প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ এবং স্কলারলি ভাবে ক্লাসিকাল ভাষা আর দর্শন চর্চার মাধ্যমেই হওয়া উচিত, এই ধরনের ধর্ম শিক্ষা পরধর্মবিদ্বেষী মধ্যযুগীয় মানসিকতার পরগাছা শ্রেণীর মানুষ তৈরি করে, তৈরি করে হুজুরদের ক্যাননফডার। আল্লামা শফি, জুনায়েদ বাবুনগরী এই গরিবের ছেলেদের নাস্তিকদের ফাঁসির দাবীতে পথে নামান, পুলিশের গুলির মুখে ঠেলে দেন। বিনিময়ে নিজেরা রোজগার করেন প্রভূত অর্থ। আওয়ামী-বামপন্থী জোট সরকারের বামপন্থী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই মাদ্রাসাগুলিকে চেয়েছিলেন সরকারের আওতায় আনতে, শফি হুজুররা হুমকি  দিয়েছিলেন যে তাহলে দেশে রক্তগঙ্গা বইবে। মাদ্রাসা ছাত্রদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগে জল ঢেলে দেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এদের দিয়ে মাদ্রাসায় গ্রেনেড তৈরি করাতে গিয়ে দুটি ছেলেকে বিস্ফোরণে মেরে ফেলেন হেফাজতের নায়েবে আমীর মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী। তবু চেষ্টা করেছিলেন নাহিদ। বাংলাদেশ পারে, আমরা পারিনা কেন?

আপনি গেয়েছেন  “শোন তালিবান তালিবান/আমি তোমাদের সাথে নেই/ আমি ধর্মে মুসলমান/ আছি লালনের সঙ্গেই”। লালনের হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরের মূর্তি কিন্তু কওমী মাদ্রাসা ছাত্ররা গিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল সুমন। আর তালিবানরা সকলেই মাদ্রাসা ছাত্র, তালেবা শব্দের মানেই ছাত্র, তাই থেকেই তালিবান। তাদের চেয়ে বেশি আরবী আপনি নিশ্চয় জানেন না।

বরং এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয়না কেন যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন গ্রামের গরিব সংখ্যালঘু মানুষকে অবৈতনিক সরকারি শিক্ষা আর মিড ডে মিলের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি, কেন তাকে মাদ্রাসায় যেতে হয়? সবাই ছেলেমেয়েকে কোরআনে হাফেজ করতে চান এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শিক্ষার অধিকারের দাবী পিছিয়ে পড়ল, উঠে এল মাদ্রাসা শিক্ষার অধিকারের দাবী?

আজ বাংলাদেশের ইতিহাস তার সবচেয়ে কঠিন সময় পেরচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে আর রায় কার্যকর করে দেশকে অভিশাপমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আমাদের কাছে তারা বৈরীভাব আশা করেন না। সে ঐতিহ্য আমাদের নয়। 

আপনি একদা বলতেন আপনার এক পিতৃবন্ধুর কথা, যিনি বাংলাদেশে গিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। আওয়ামী নেতারা কিভাবে তাঁর কথা তোলায় বিরক্ত হয়েছিলেন আপনার সফরকালীন তাও বলেন। কিন্তু আপনি কি জানেন না বিএনপি দলটির ইতিহাস কি? আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে বহু জমি দখলের অভিযোগ আছে, তাদের দলে অনেক বেনোজল রয়েছে, সব কথাই সত্যি। কিন্তু বিএনপির পার্টি লাইন আদর্শগত ভাবে পৃথক। ২০০১ এ ক্ষমতায় এসে তারা আর জামাত সংখ্যালঘুদের ওপর কি ভয়ানক সন্ত্রাস চালিয়েছিল মনে আছে? হুমায়ুন আজাদ যাকে বলেছেন হিন্দু তরুণীদের উপর দিয়ে ধর্ষণের ঝড় বয়ে যাওয়া? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে শাহাবুদ্দীন কমিশন গড়েন, রিপোর্ট জমা পড়ে। পূর্ণিমা শীলের বহু আলোচিত গনধর্ষণ মামলা (তার মা বলেছিলেন, বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট, একজন একজন করে যাও, নইলে মরে যাবে) ছাড়া কোন ক্ষেত্রেই এখনো বিচার শেষ হয়নি। অন্য একটি ক্ষেত্রে বিচার চলছে, যেখানে বিএনপি অফিসে গণধর্ষণ করে যোনিতে বালি আর কাচের গুঁড়ো ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে।  

যোনির মত এক রম্য, সুন্দর এবং কৌতূহলোদ্দীপক প্রদেশে পারস্পরিক সম্মতিতে জিভ এবং পুরুষাঙ্গ ব্যতীত অন্য কিছু প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার কদর্যতা একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে আমি ভাবতেই পারিনা। কিন্তু আমরা তো সাধারণ মানুষ, রাজনীতি করিনা, ধর্মীয় রাজনীতি করিনা, সুমন।  

শামসুর রহমান দেশত্যাগী সংখ্যালঘুদের জন্য একটি আশাবাদী কবিতা লিখেছিলেন, নাম’সুধাংশু যাবে না’। তার শুরুটা এইরকমঃ  

লুণ্ঠিত
মন্দির, আর অগ্নিদগ্ধ বাস্তুভিটা থেকে

একটি বিবাগী স্বর সুধাংশুকে
ছুঁলো

‘আখেরে কি তুমি চলে যাবে?’ বেলা শেষে

সুধাংশু ভস্মের মাঝে খুঁজে

বেড়ায় দলিল, ভাঙা চুড়ি, সিঁদুরের স্তব্ধ কৌটা,

স্মৃতির বিক্ষিপ্ত পুঁতিমালা।

স্বর বলে, ‘লুটেরা তোমাকে জব্দ ক’রে

ফেলে আশে পাশে

তোমার জীবনে নিত্যদিন লেপ্টে
থাকে

পশুর চেহারা সহ ঘাতকের ছায়া,

আতঙ্কের বাদুড় পাখার নিচে
কাটাচ্ছ প্রহর,

তবু তুমি যেও না সুধাংশু।’

পরে বড় দুঃখে এর একটা প্যারডি করেছিলেন আলমগীর হুসেন, নাম দিয়েছিলেন ‘সুধাংশু তুই পালা’। তার একটু তুলে দিলামঃ

 পাগলামি করিসনে বন্ধু সুধাংশু
 সময় যে পার হয়ে যাচ্ছে
 এবার যে তোর পালানোর বেলা
 জিদ করিসনে বন্ধু, এখনই তুই পালা।

জানি তুই কী ভাবছিস বন্ধু সুধাংশু
 দাঁড়িয়ে হাহাকারের ছোঁয়ায়
জড়ানো শ্মশানসম বাস্তুভিটায়
 সেই হারিয়ে যাওয়া প্রাণচঞ্চল
দিনগুলো, আমাদের ছেলেবেলা
 কিন্তু এবার যে তোর পালানোর
বেলা, এবার তুই পালা।...

আরও জানি
বন্ধু সুধাংশু
তোর ষোড়শী বোনটি ‘মিলা’
দুষ্টামির ছলে আর বলতে পারবে না: আলমদা তুমি এত কৃপণ কেন?
চলো মেলায় নিয়ে, কিনে দিতে হবে সুন্দর একটি মালা।
তথাপি তোকে পালাতে যে হবে, এবার তুই পালা।...

মিলাকে যে বিশ্ব জয় করতেই হবে বন্ধু সুধাংশু
অসাধারণ সুন্দরী মেধাবী মিলার
জন্য এক ধর্ষিত, অচ্ছুৎ,
অভাগী নারীর জীবন ­
হবে মানবতার জন্য এক অমার্জনীয়
ব্যর্থতা।
তাই আমার কাতর মিনতি বন্ধু, এখনই তুই পালা।

বিজেপি ভাল করেই জানেন পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের ঘাঁটি গাড়ার উপায় বাংলাদেশ বিষয়ে যে sentiment এখানে কাজ করে তাকে শ্রীলঙ্কার তামিলদের নিয়ে তামিল ভাবাবেগের মত খুঁচিয়ে তোলা। এখানে বিষয়টা তামিলনাদের চেয়েও সাংঘাতিক হতে পারে, কারণ ওখানে সমস্যা এথনিক, ধর্মীয় ততটা নয়। সাম্প্রদায়িক অভিজ্ঞতা মানুষকে সাম্প্রদায়িক করে, দেশভাগের সময় যারা এদেশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে গিয়ে বসতি করেন সাতক্ষীরার মত সীমান্ত এলাকায় তাদের মধ্যে জামাতের বিরাট প্রভাব রয়েছে। এপারে চলে আসা হিন্দুদের ক্ষেত্রে বিজেপি ঘাঁটি গাড়তে পারেনি উদ্বাস্তুদের নিয়ে বাম আন্দোলনের কারণেই (বাম মানে কেউ শুধু সিপিএম মনে করবেন না দয়া করে)। আজ বামপন্থীদের সামগ্রিক দুর্বলতার সুযোগেই শক্তিশালী হচ্ছে বিজেপি। আমরাও বহুযুগ এই ইস্যুগুলিকে কার্পেটের তলায় চাপা দিয়ে রেখেছিলাম, আজ বোতল থেকে বেরিয়ে এসেছে এই দৈত্য। সব ধরনের মৌলবাদকেই আক্রমণ করতে পারিনি আমরা, সেই সুযোগে সেই জায়গা দখল করেছে হিন্দুত্ববাদ।

আপনি ভাবুন তো সুমন, সাঈদীর বরিশাল (প্রথম আলো ২০০১ এ লিখেছিল সাঈদীর নির্বাচনী কেন্দ্র পিরোজপুর সংখ্যালঘুদের বধ্যভূমি হয়ে উঠেছে) বা নিজামীর পাবনা থেকে পালিয়ে আসা কেউ যখন দেখেন এদেশের রাস্তায় সাঈদী-নিজামীদের মুক্তির দাবীতে মিছিলকে সাহায্য করছে মমতার পুলিশ, কি মনোভাব হয় তাঁর? এরপরেও কি বুঝিয়ে দিতে হবে মমতা কিভাবে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি তরান্বিত করছেন?

আমি কিন্তু অন্য বাংলাদেশকে চিনেছি, যে বাংলাদেশের পাশে আমাদের থাকতেই হবে। তাই খাগড়াগড়ের তদন্ত জরুরী। আমার মনে পড়ে যাচ্ছে হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ এর শেষাংশ, যেখানে শিবিরকর্মী তরুণটির উত্তরণ ঘটে এক হিন্দু তরুণীর প্রেমে, তারা পরস্পরকে চুম্বন করতে করতে দেখতে পায় সবুজ ঘাসের মধ্যে দিয়ে লাল সূর্য উঠছে। এ নাহয় গল্প, নাস্তিক ব্লগার সুব্রত শুভের কথা তো মিথ্যে নয়। ঘটনাচক্রে হিন্দু পরিবারে জন্মানো নাস্তিক ব্লগার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের ছাত্র সুব্রত গ্রেপ্তার হন ধর্মে আঘাত করার জন্য, বিপ্লব রহমান, রাসেল পারভেজদের সঙ্গেই। তার মুসলিম প্রেমিকা ক্যামেলিয়া পাগলের মত ছোটাছুটি করত উকিলদের দরজায় দরজায়, আদালতে এসে কাঁদত হাউহাউ করে। ক্যামেলিয়া লিখেছিল, রাস্তায় যেতে যেতে কল্পনা করে সে যে দেশটা চলে গেছে কিছু হিংস্র মানুষের হাতে, পর্দা করে না বলে, ইউনিভার্সিটিতে পড়ে বলে, হিন্দু ছেলের সঙ্গে প্রেম করে বলে পিঠে দোররা মেরে তাকে রক্তাক্ত করা হচ্ছে, এ লড়াই তাই তারও লড়াই। সুব্রত আর ক্যামেলিয়া, আমি যতদূর জানি, বিয়ে করেছে।

শামসুর রহমানের কবিতার শেষাংশ দিয়ে শেষ করছি আমার প্রলাপঃ

 আকাশের নীলিমা এখনো
হয়নি ফেরারি, শুদ্ধাচারী গাছপালা
আজও সবুজের
পতাকা ওড়ায়, ভরা নদী
কোমর বাঁকায় তন্বী বেদিনীর মতো।
এ পবিত্র মাটি ছেড়ে কখনো কোথাও
পরাজিত সৈনিকের মতো
সুধাংশু যাবে না।

ধন্যবাদান্তে,

জনৈক
সহনাগরিক
পরিচয় পাত্র

November 4, 2014 at 7:59pm

Source: Parichoy Patra's facebook

Nov 7, 2014


Your Comment if any