banner-47
bar-bangla

 
 
 
 
 

যুদ্ধ, শিল্প ও এই সময়:
শিল্পীর দায়িত্ব

অমিতাভ ভট্টাচার্য

‘War is a cowardly escape from the problem of peace’-- Thomas Mann

ab-juddha-1

মানব সভ্যতার ইতিহাসে যুদ্ধ হল রাস্ট্রীয় অসভ্যতা ও লালসার এক অপরিণামদর্শী, ধ্বংসাত্মক, অমানবিক কর্মকান্ড। এবং এর বিপরীতে তার প্রতিক্রিয়ায় সদর্থক ভাবে শিল্প আর এক কর্মকান্ড। যুদ্ধের নগ্নতাকে তুলে ধরতে পারে একমাত্র সার্থক শিল্প-ই। কারণ শিল্প সৃস্টি ঠিক ততোধিক শক্তিশালী এক ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড। যদিও তা মানবিকতার সপক্ষে শিল্পীর দায়বোধ হতে উৎসারিত।

ab-juddha-2

যুদ্ধের হাতিয়ার যেমন বন্দুক, গোলা-বারুদ, কামান, আণবিক অস্ত্র, মিসাইল, বোমারু বিমান। তেমন-ই শিল্পের হাতিয়ার রঙ-তুলি, ছেনি-হাতুরি, রেখা, ফর্ম, রঙ, বুনোট, প্যাটার্ন, প্রতীক। যুদ্ধের হাতিয়ার যেমন বিস্ফোরণ ঘটায় নিস্পাপ জনপদে, সবুজ প্রান্তরে সেভাবেই শিল্পের হাতিয়ারগুলো বিস্ফোরণ হানে সাদা ক্যানভাসে, দেওয়ালে, কাগজে, পাথরে, একতাল মাটিতে।

ab-juddha-3

যদিও, এইকথাগুলো বহু আলোচিত, তবুও এইসবই মনে আসছে প্রায় উন্মাদ ও অপদার্থ এক রাস্ট্র ও তার সহযোগী মিডিয়ার যুদ্ধের জিগির বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রকল্প দেখে। সারা দেশ ভাইরাস এর দাপটে বিপন্ন। -অসহায় নিরন্ন শ্রমজীবী মানুষ ঘরে ফিরতে চাইছেন। মরছেন অনেকে নিত্য। গরীব মানুষ আরও গরীব হয়ে যাচ্ছেন। সেই সময়েই বাজারি সংবাদ পত্রের প্রথম পাতা ভারানো হচ্ছে বৈমানিকের বীরত্বগাথা দিয়ে।

‘Violence is the first refuge of the incompetent’. – Issac Asimov

আর মানুষদের তাতানো হচ্ছে আমাদের কত কত মিসাইল ও আণবিক অস্ত্রের মজুত আছে তার হিসেব দিয়ে। অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ জেনারেলরা অতীত গৌরবের কথা ফলাও করে বিবৃত করছেন টিভিতে। বলছেন রাজার ঘরে যে ধন আছে টুনির ঘরে সে ধন আছে। দেশ বিপন্ন, তাই নাকি যুদ্ধ প্রয়োজন। তাও এমন এক দেশের সঙ্গে, যাদের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে বাণিজ্যের পরিমাণ আকশ ছোঁয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রী মশাইয়েরা ঘন ঘন ওই দেশে যাতায়াত করছেন। আসলে মূল সমস্যা থেকে চোখ ঘুরিয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য। কেন্দ্রিয় সরকারের সেই প্রকল্পের শরিক বাংলা মিডিয়াগুলোও। দিন রাত যুদ্ধের জিগির তুলে হাওয়া গরম করে চলেছে।

ab-juddha-4

যুদ্ধ হবে এই সম্ভাবনার কথা শুনেই চিত্রশিল্পী হিসাবে তাই আবার ফিরে দেখতে থাকি ভ্যাসিলি ভেরেসচিগেনের ‘অ্যাপোথিয়েসিস অব ওয়ার’-এ জড়ো করা করোটির স্তূপ, ক্যাথে কোলভিতস-এর কাঠ খোদাই, পিকাসোর বিশালাকার গের্নিকায় মূর্ত ফ্যাসিস্টদের ধ্বংসলীলা, অটো ডিস্কের ট্রেঞ্চ, হুবার্ট ল্যাজিংগারের পতাকা হাতে রোমান যোদ্ধার বেশে হিটলার, সেকুরাস, ওরোস্কো, পল ন্যাস থেকে সাম্প্রতিক আফগান যুদ্ধের আবহে শিল্পী ওমাহেইদ সারিফির উদ্যোগে গড়ে ওঠা ওয়ার লর্ডস-এর মতনই ‘আর্ট লর্ডস’ গ্রুপের যোদ্ধা শিল্পীদের কংক্রিটের দেওয়ালে আঁকা জোরালো ম্যুরালগুলো। এইসব শিল্পকর্ম গুলো শুধু যুদ্ধের প্রত্যক্ষণে রচিত শৈল্পিক সংবেদকে প্রকাশ করে তা নয় –খুঁজতে চায় প্রকৃত অর্থে হিংসার স্বরূপ।

ab-juddha-5

হিংসার স্বরূপ সন্ধানের শৈল্পীক ভঙ্গিমা বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়ে যায়। -কখনও তা শিল্পীর একক সৃজনে, কখনও বা যৌথ জন-শিল্পে বা পাবলিক আর্টে সরাসরি। শিল্পী পল ন্যাস যিনি এঁকেছিলেন যুদ্ধ বিদ্ধস্ত উষর, পরিতক্ত ল্যান্ডস্কেপ। তিনি ১৯১৭ সালে এক চিঠিতে তাঁর স্ত্রীকে লিখছেন ‘আমি এখন আর শিল্পী নই, একজন সংবাদ বাহক মাত্র -যার কাজ হল যুদ্ধরত সৈনিকদের কথাগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যারা যুদ্ধকে জীইয়ে রাখতে চায়। আমার সংবাদের ভাষা দূর্বল, অসংলগ্ন কিন্তু তিক্ত এবং নির্মম সত্য যা পুড়িয়ে দিতে পারে ওদের পাষাণ হৃদয়গুলোকে’।

ab-juddha-6

যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল জার্মান শিল্পী ফ্রাঞ্জ মার্ককে ১৯১৫ সালে। সে যুদ্ধে মার্ক নিহত হন। যে শিল্পীদের ভাগ্যক্রমে যুদ্ধে যেতে হয়নি তাদের বুকে তৈরি হয়েছিল ক্ষতচিহ্ন। শিল্পী উইলিয়াম অর্পেনকে হুকুম করা হয়েছিল যুদ্ধবাজ জার্মান নেতাদের প্রতিকৃতি আঁকবার। তার পরিবর্তে তিনি এঁকে দিয়েছিলেন জাতীয় পতাকায় মোড়া এক কফিন আর তার পাশে পড়ে থাকা এক মৃত সৈনিকের কঙ্কাল। সেই ছবিটি বাজেয়াপ্ত হয়।

ab-juddha-7

যুদ্ধের প্রতিরোধে এই যুদ্ধ যার নাম শিল্প -তার আক্রমণ থেমে নেই। আফগানিস্তানে আহমেইদ সারিফির ‘আর্ট লর্ড’-এর সদস্যরা আক্রমণ চালিয়েই যাচ্ছেন ‘ওয়ার লর্ড’-দের ওপর।

ab-juddha-8

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড চলছে পুরো মধ্য এশিয়ায়। ওরাই মনে হয় সরাসরি পাবলিক আর্ট-এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধে নেমেছেন —আকাশে উড়ছে বোমারু বিমান, চারপাশে বারুদের গন্ধ। ওরা জন্ম দিচ্ছেন এই আবহের মধ্যেও এক পজিটিভ ভিস্যুয়াল অভিজ্ঞতার —দর্শক ও দেওয়ালচিত্রের যৌথ সংলাপ।

ab-juddha-9

সামসিয়া হাসানী— দুঃসাহসী আফগান মহিলা শিল্পী যিনি মৌলবাদী সমাজে নারী মুক্তি আন্দোলনের এক যোদ্ধা। সামসিয়া তার চলমান পথ-শিল্পের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছেন আকাশের বোমারু বিমানকে যেন। তাঁর ‘স্বপ্নের গ্রাফিতি’ শীর্ষক সিরিজের দেওয়াল চিত্রের মধ্য দিয়ে বলছেন —‘শিল্প যুদ্ধের চেয়েও শক্তিশালী’।

এই সংকটে ভারতীয় শিল্পীরা কী কিছু করার কথা ভাবতে পারেন না? দেওয়াল গ্রাফিতি না হোক লুকিয়ে চুরিয়ে চিত্রময় ইস্তাহার ছড়িয়ে দিতে পারা যায়না যত্র তত্র? যেভাবে ডেসমনড টুটু চেয়েছিলেন কালোদের বস্তিতে বস্তিতে রচিত হোক কাঠ খোদাই ইস্তাহার আর ছড়িয়ে পড়ুক সোয়েটো থেকে জো বার্গ, ডারবান, কয়াজুলু নাটাল থেকে সারা দেশে। এই গরীব মানুষ বিরোধী উন্মাদ দানব রাষ্ট্রের বদমায়েশিকে চিত্রময় ইস্তেহার ছড়িয়ে দেওয়া যায় না সারা দেশের গ্রাম থেকে শহরে?

Back to Home Page

Jul 3, 2020


Amitava Bhattacharya amitavabh60@gmail.com


আজ কবি শঙ্খ ঘোষের জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

আজ সারাদিন শঙ্খ বাজুক বাংলার ঘরে ঘরে,
এসো, সারারাত জাগি প্রহরায় ভিতরে বাহিরে
হয়ে উঠি যা আমাদের হওয়ার কথা ছিল, 
অন্ধের স্পর্শের মতো ফুটুক রক্তকরবী মোড়ে মোড়ে
কুরুক্ষেত্র জুড়ে ঘৃণার ব্যূহগুলি সেজেছে আবার,
এসো, প্রত্যাখ্যান  করি ধর্মাধর্মের নামে সাম্রাজ্যের খেলা
শিবিরের শেকল থেকে মুক্ত হোক বন্দী বিবেক,
সকল হুঙ্কারের মুখে জ্বেলে নিইনি:শব্দের শিখা
ব্যক্তিগত ফ্যাসিবাদও পোড়াই সে আগুনে
ইস্তেহারে মুখ ঢেকে শপথের শবগুলি পড়ে আছে পথে, 
শ্বশানবন্ধুর দল, বিমূঢতা ভুলে এসো অস্বীকার করি
লুম্পেনের তর্জনীসংকেত পাড়ায় পাড়ায়, মানচিত্র জুড়ে
কবির সঙ্গে হাঁটি প্রতিবাদী প্রাণের মিছিলে।
-বিশ্বজিৎ রায়, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৫

Top

অন্যান্য লেখা


'নো ভোট টু বিজেপি' - “ফ্যাসিস্ত আরএসএস-বিজেপি’র বিরুদ্ধে বাংলা”র তরফে ডাক
ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পর্যায়ে দাঁড়িয়ে - অমিত ভাদুড়ি ("In the middle of end game of fascism" এর সংক্ষেপিত বাংলা অনুবাদ।
অনুবাদ করেছেন সুমিতা সরকার ও রবিন চক্রবর্তী। )
নতুন কৃষি আইনে চাষবাসঃ অশনি সংকেত - কিষাণ স্বরাজ সমিতির রাজ্য টিম
বাংলায় বামপন্থী আন্দোলনের মূল নিশানা হবে বিজেপি - প্রেস ক্লাবে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
৮ই মার্চ, ক্লারা জেটকিন স্মরণে ‌ - - ফারুক চৌধুরী। অনুবাদক: সৈয়দা আফিয়া মাসুমা
কোভিড-১৯ মহামারী: মানুষের পাশে থাকার জন্য বামপন্থীদের বলিষ্ঠ কর্মসূচি সূচনার এখনই সময় ‌ - ফ্রেড ম্যাগডফের সাক্ষাৎকার / সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারুক চৌধুরী। অনুবাদক: সামিয়া ইসলাম
চে ‌ - ফারুক চৌধুরী। অনুবাদক: আনোয়ার জাহান সফল
র‍্যাডিকাল পদক্ষেপ না নিলে আমাদের ভবিষ্যৎ যেমন হবে, তারই ইঙ্গিত কভিড-১৯ ‌ - মাইকেল ডি ইয়েটসের সাক্ষাৎকার / সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারুক চৌধুরী। অনুবাদক: ওমর রাদ চৌধুরী
কোভিড নাইনটিন, অর্থনৈতিক সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তন: পুঁজিবাদী দুর্যোগ ‌ - জন বেলামি ফস্টার: সাক্ষাৎকার / সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারুক চৌধুরী। অনুবাদক: ওমর রাদ চৌধুরী
কী আমার পরিচয় মা! - প্রবুদ্ধ বাগচী
প্রতিরোধের দীক্ষা - শতাব্দী দাশ
হম দেখেঙ্গে - অনুবাদ: নীলাঞ্জন হাজরা
দ্বন্দ্বতত্ত্ব কাকে বলে - রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
বিজ্ঞান এবং মেধা চর্চার বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক - মূল রচনাঃ রামচন্দ্র গুহ, অনুবাদঃ অঞ্জন মজুমদার
বিকল্প ভবিষ্যতের স্বপ্নসন্ধান - মূমূল রচনাঃ দেবাদিত্য ভট্টাচার্য এবং রীনা রামদেব, অনুবাদঃ অঞ্জন মজুমদার
ও পারে বৃষ্টি, এ পার খটখটে - স্বাতী ভট্টাচার্য্য
ঘটিকাহিনী - পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাগলামীর ইতিহাস ও সভ্যতার ধারণা - সলিমুল্লাহ খান।। সেমিনার
সে তো তেমন গৌরী নয় - নীলাঞ্জন দত্ত
 
 
 
 
 
 
 
শোক নয় ক্রোধ -শঙ্কর রায অভিজিৎ রায়কে নিয়ে
 
তিনি বৃদ্ধ হলেন -অভিজিৎ রায় তাঁর বাবা অধ্যাপক অজয় রায়কে নিয়ে...
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
সম্পর্ক: শরৎ-সেপ্টেম্বর  –স্বাতী গাঙ্গুলী (সূত্রঃ -তিন পাহাড়)
 
গল্প: প্রবাহ  –বিশ্বজিৎ রায় (সূত্রঃ জনস্বার্থ বার্তা শারদ সংখ্যা)
 
 
 
 
 
 
 
 
উনুনের ধোঁয়া –জয় দাসগুপ্ত’র কবিতা
 
 
 
 
 
 
 
 
ঈদ সংখ্যা  -বাংলা ট্রিবিউন
 
 
 
 
পরমাণু সন্ত্রাস –সুজয় বসু  -মূল সূত্রঃ পরিকথা
 
 
 
নবারুন ভট্টাচার্য স্মরণ :
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
 
কবির নিজের কন্ঠে শুনুন
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
 
 

Top